Wednesday, October 19, 2011

হজকর্ম সমূহের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

লেখকঃ মুহাম্মাদ শামসুল হক সিদ্দীক

তাওয়াফ

পবিত্র কুরআনে এসেছে :
...এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাইলের নিকট অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে,  তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী ও ইতিকাফকারীদের এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখ।(সুরা বাকারাঃ১২৫)
 এ আয়াত থেকে বুঝা যায় তাওয়াফ কাবা নির্মাণের পর থেকেই শুরু হয়েছে।

রামল

রামল শুরু হয় সপ্তম হিজরীতে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ষষ্ঠ ‘হিজরীতে হুদায়বিয়া থেকে ফিরে যান উমরা আদায় না করেই। হুদায়বিয়ার চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী বছর তিনি ফিরে আসেন উমরা পালনের উদ্দেশ্যে। সময়টি ছিল যিলকদ মাস। সাহাবাদের কেউ কেউ জ্বরাক্রান্ত হয়েছিলেন এ বছর। তাই মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে পরস্পরে বলাবলি করতে লাগল, ‘এমন এক সম্প্রদায় তোমাদের কাছে আসছে ইয়াছরিবের (মদিনার) জ্বর যাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে’।  শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাদেরকে (রাঃ) রামল অর্থাৎ আমাদের যুগের সামরিক বাহিনীর কায়দায় ছোট ছোট কদমে গা হেলিয়ে বুক টান করে দৌড়াতে বললেন। উদ্দেশ্য, মুমিন কখনো দুর্বল হয় না এ কথা মুশরিকদেরকে বুঝিয়ে দেয়া (সহীহ মুসলিমঃ ৪/২৯২৪ ইঃফাঃ)। একই উদ্দেশ্যে রামলের সাথে সাথে ইযতিবা অর্থাৎ চাদর ডান বগলের নীচে রেখে ডান কাঁধ উন্মুক্ত রাখারও নির্দেশ করলেন তিনি। সেই থেকে রমল ও ইযতিবার বিধান চালু হয়েছে।

যমযমের পানি ও সাফা মারওয়ার সাঈ

 ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘ইব্রাহীম (আঃ) হাজেরা ও তাঁর দুগ্ধপায়ী সন্তান ইসমাইলকে নিয়ে এলেন ও বায়তুল্লাহর কাছে যমযমের উপর একটি গাছের কাছে রেখে দিলেন। মক্কায় সে সময় মানুষ বলতে অন্য কেউ ছিল না। পানিরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না তখন সেখানে। এক পাত্রে খেজুর ও অন্যটিতে পানি রেখে ফিরে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলেন ইব্রাহীম (আঃ)। ইসমাইল (আঃ) এর মা তার পিছু নিলেন। বললেন, এই জনমানবশূন্য তৃণ-লতা-হীন ভূমিতে আমাদেরকে ছেড়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি একাধিকবার ইব্রাহীম (আঃ) কে কথাটা বললেন। ইব্রাহীম তার দিকে না তাকিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহ কি আপনাকে নির্দেশ করেছেন? হাঁ, ইব্রাহীম (আঃ) উত্তর করলেন। তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। হাজি ফিরে এলেন। ইব্রাহীম এগিয়ে চললেন। তিনি যখন দু’পাহাড়ের মধ্য খানে সরু পথে প্রবেশ করলেন, যেখানে কেউ তাঁকে দেখছে না, তিনি বায়তুল্লাহর পানে মুখ করে দাঁড়ালেন! হাত উঠিয়ে এই বলে দোয়া করলেন,-
  হে আল্লাহ! আমি আমার বংশধরকে শস্যবিহীন এক উপত্যকায় বসবাস করতে রেখে দিলাম, তোমার পবিত্র ঘরের সন্নিকটে। হে আল্লাহ যাতে তারা সালাত কায়েম করে। অতঃপর মানুষের হৃদয় তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে দাও, এবং তাদের রিজিক দাও ফলের, যাতে তারা শুকরিয়া আদায় করতে পারে।’(সুরা ইব্রাহীমঃ৩৭) 
 ইসমাইল (আঃ) এর মা তাকে দুধ পান করাতে থাকলেন। নিজে ওই পানি থেকে পান করে গেলেন। পাত্রের পানি শেষ হয়ে গেলে তিনি পিপাসার্ত হলেন। পিপাসা পেল সন্তানকেও। সন্তানকে তিনি তেষ্টায় কাতরাতে দেখে সরে গেলেন দূরে যাতে এ অবস্থায় সন্তানকে দেখে কষ্ট পেতে না হয়। পাহাড়সমূহের মধ্যে সাফাকে তিনি পেলেন সবচেয়ে কাছে। তিনি সাফায় আরোহণ করে কাউকে দেখা যায় কি-না জানার জন্য উপত্যকার দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। কাউকে দেখতে না পেয়ে সাফা থেকে নেমে এলেন। উপত্যকায় পৌঁছালে তিনি তাঁর কামিজ টেনে ধরে পরিশ্রান্ত ব্যক্তির মতো দ্রুত চললেন। উপত্যকা অতিক্রম করলেন। অতঃপর মারওয়ায় আরোহণ করলেন। মারওয়ায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখলেন কাউকে দেখা যায় কি-না। কাউকে দেখতে না পেয়ে নেমে এলেন মারওয়া থেকে। আর এ ভাবেই দু’পাহাড়ের মাঝে সাতবার প্রদক্ষিণ করলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, এটাই হল সাফা মারওয়ার মাঝে মানুষের সাঈ (করার কারণ)। তিনি মারওয়ার ওপর থাকাকালে একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিজেকে করে বললেন, ‘থামো!’ তিনি আবারও আওয়াজটি শুনতে পেয়ে বললেন- শুনতে পেয়েছি, তবে তোমার কাছে কোনো ত্রাণ আছে কি না তাই বলো। তিনি দেখলেন, যমযমের জায়গায় একজন ফেরেশতা তাঁর পায়ের গোড়ালি বা পাখা দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পানি বের হয়ে এল, তিনি হাউজের মতো করে পানি আটকাতে লাগলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ ইসমাইলের মাতার ওপর রহম করুন। তিনি যমযমকে ছেড়ে দিলে, বর্ণনান্তরে-যমযমের পানি না ওঠালে, যমযম একটি চলমান ঝরনায় পরিণত হত।ফেরেশতা হাজেরাকে বললেন, হারিয়ে যাওয়ার ভয় করো না, কেননা এখানে বায়তুল্লাহ, যা নির্মাণ করবে এই ছেলে ও তার পিতা। আর আল্লাহ তার আহালকে ধ্বংস করেন না।(সহীহ বুখারী ৬/৩১২৬; ইঃফাঃ)

উকুফে আরাফা

আমরা সুনির্দিষ্ট স্থানের বাইরে উকুফে আরাফা করছিলাম। ইবনে মেরবা আনসারি আমাদের কাছে এলেন এবং বললেন, আমি আপনাদের কাছে রাসূলুল্লাহর প্রতিনিধি। তিনি বলেছেন: হজের মাশায়ের—জায়গায় অবস্থান করুন—কেননা আপনারা আপনাদের পিতা ইব্রাহীমের ঐতিহ্যের ওপর রয়েছেন(আবু দাউদ ৩/১৯১৭ ইঃফাঃ)। এর অর্থ ইব্রাহীম (আঃ) উকুফে আরাফা করেছিলেন, সে হিসেবে আমরাও করে থাকি।

হজ পালনের পবিত্র স্থানসমূহের পরিচিতি

পবিত্র কাবা

১৪১৭ হিজরীতে বাদশা ফাহাদ ইবনে আব্দুল আজীজ সংস্কার করেন পবিত্র কাবা ঘর। ৩৭৫ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১০৪০ হিজরীতে সুলতান মারদান আল উসমানির সংস্কারের পর এটাই হল ব্যাপক সংস্কার। বাদশা ফাহাদের সংস্কারের পূর্বে পবিত্র কাবাকে আরও ১১ বার নির্মাণ পুনর্নিমাণ সংস্কার করা হয়েছে বলে কারও কারও দাবি। নীচে নির্মাতা, পুন:নির্মাতা, ও সংস্কারকের নাম উল্লেখ করা হল-
১. ফেরেশতা। ২. আদম।. ৩. শীশ ইবনে আদম। ৪.ইব্রাহীম ও ইসমাইল (আ) ৫. আমালেকা সম্প্রদায়। ৬. জুরহুম গোত্র। ৭.কুসাই ইবনে কিলাব। ৮ .কুরাইশ। ৯.আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) [৬৫ হি.] ১০. হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ [৭৪ হি.] ১১. সুলতান মারদান আল-উসমানী [১০৪০ হি.] বাদশা ফাহাদ ইবনে আব্দুল আজীজ [১৪১৭ হি.]। (দেখুন- ডঃ মুহাম্মদ ইলিয়াস আব্দুল গনি, তারিখু মাক্কাল মুকাররামা, পৃঃ৩৪)

 পবিত্র কাবার উচ্চতা ও দৈর্ঘ্য-প্রস্থ

উচ্চতাঃ ১৪ মিটার; মুলতাযামের দিকে দৈর্ঘ্যঃ ১২.৮৪ মিটার; হাতিমের দিকে দৈর্ঘ্যঃ ১১.২৮ মিটার; রুকনে ইয়ামানি ও হাতিমের মাঝখানকার দৈর্ঘ্যঃ ১২.১১ মিটার; হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে য়ামানির মাঝখানকার দৈর্ঘ্যঃ ১১.৫২ মিটার

 হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর)

পবিত্র কাবার দক্ষিণ কোণে, জমিন থেকে ১.১০ মিটার উচ্চতায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত। হাজরে আসওয়াদ দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ১৭ সেন্টিমিটার। শুরুতে হাজরে আসওয়াদ একটুকরো ছিল, কারামিতা সম্প্রদায় ৩১৯ হিজরীতে পাথরটি উঠিয়ে নিজেদের অঞ্চলে নিয়ে যায়। সেসময় পাথরটি ভেঙে ৮ টুকরায় পরিণত হয়। এ টুকরোগুলোর সবচেয়ে বড়োটি খেজুরের মতো। টুকরোগুলো বর্তমানে অন্য আরেকটি পাথরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে যার চার পাশে দেয়া হয়েছে রুপার বর্ডার। রুপার বর্ডারবিশিষ্ট পাথরটি চুম্বন নয় বরং তাতে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদের টুকরোগুলো চুম্বন বা স্পর্শ করতে পারলেই কেবল হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ করা হয়েছে বলে ধরা হবে।
হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে নেমে-আসা একটি পাথর (নাসায়ি: ৫/২২৬, আলাবানি এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন: সহিহু সুনানিন নাসায়ি:২৭৪৮) যার রং শুরুতে—এক হাদিস অনুযায়ী—দুধের বা বরফের চেয়েও সাদা ছিল। পরে আদম-সন্তানের পাপ তাকে কালো করে দেয় (তিরমিযি: হজ অধ্যায়-৮৭৭, ইবনু খুজায়মা: ৪/২৮২)।
হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলে গুনাহ মাফ হয় (নাসায়ি:৫/২২১; আলাবানি এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, নং ২৭৩২)। হাজরে আসওয়াদের একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট রয়েছে, যে ব্যক্তি তাকে চুম্বন-স্পর্শ করল, তার পক্ষে সে কিয়ামতের দিন সাক্ষী দেবে (আহমদ:১/২৬৬; আলবানি এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন; দ্রঃ সহিহ ইবনে মাযাহ, নং ২৩৮১)। তবে হাজরে আসওয়াদ কেবলই একটি পাথর যা কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ কোনোটাই করতে পারে না(সহীহ বুখারীঃ ৩/১৫০২ ইঃফাঃ)।

রুকনে ইয়ামানি

কাবা শরীফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ। তাওয়াফের সময় এ কোণকে সুযোগ পেলে স্পর্শ করতে হয়। চুম্বন করা নিষেধ। হাদিসে এসেছে, ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দুই রুকনে ইয়ামানি ব্যতীত অন্য কোনো জায়গায় স্পর্শ করতে দেখিনি।(সহীহ বুখারীঃ ৩/১৫১৩)

মুলতাযাম

হাজরে আসওয়াদ থেকে কাবা শরীফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে মুলতাযাম বলে (আল মুসান্নাফ লি আব্দির রাজ্জাক: ৫/৭৩)। মুলতাযাম শব্দের আক্ষরিক অর্থ এঁটে থাকার জায়গা। সাহাবায়ে কেরাম মক্কায় এসে মুলতাযামে যেতেন ও দু’হাতের তালু, দু’হাত, ও চেহারা ও বক্ষ রেখে দোয়া করতেন। বিদায়ি তাওয়াফের পূর্বে বা পরে অথবা অন্য যে কোনো সময় মুলতাযামে গিয়ে দোয়া করা যায়। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন—
إن أحب أن يأتي الملتزم وهو ما بين الحجر الأسود والباب فيضع عليه صدره ووجهه وذراعيه وكفيه ويدعو، ويسأل الله تعالى حاجته، فعل ذلك وله أن يفعل قبل طواف الوداع ، فإن هذا الالتزام لا فرق بين أن يكون حال الوداع وغيره ، والصحابة كانوا يفعلون ذلك حين يدخلون مكة
যদি মুলতাযামে আসার ইচ্ছা করে মুলতাযাম হল হাজরে আসওয়াদ ও দরজার মধ্যবর্তী স্থানÑ অতঃপর সেখানে তার বক্ষ, চেহারা, দুই বাহু ও দুই হাত রাখে ও দোয়া করে, আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজনগুলো সওয়াল করে তবে এরূপ করার অনুমতি আছে। বিদায়ি তাওয়াফের পূর্বেও এরূপ করতে পারবে। মুলতাযাম ধরার ক্ষেত্রে বিদায়ি অবস্থা ও অন্যান্য অবস্থার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আর সাহাবগণ যখন মক্কায় প্রবেশ করতেন তখন এরূপ করতেন (শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার মজমূউল ফতুওয়া: ২৬/১৪২)। তবে বর্তমান যুগে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে মুলতাযামে ফিরে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই সুযোগ পেলে যাবেন অন্যথায় যাওয়ার দরকার নেই। কেননা মুলতাযামে যাওয়া তাওয়াফের অংশ নয়।

মাকামে ইব্রাহীম

মাকাম শব্দের আভিধানিক অর্থ, দণ্ডায়মান ব্যক্তির পা রাখার জায়গা। আর মাকামে ইব্রাহীম বলতে সেই পাথরকে বুঝায় যেটা কাবা শরীফ নির্মাণের সময় ইসমাইল নিয়ে এসেছিলেন যাতে পিতা ইব্রাহীম এর ওপর দাঁড়িয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করতে পারেন। ইসমাইল (আঃ) পাথর এনে দিতেন, এবং ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পবিত্র হাতে তা কাবার দেয়ালে রাখতেন। ঊর্ধ্বে উঠার প্রয়োজন হলে পাথরটি অলৌকিকভাবে ওপরের দিকে উঠে যেত (ড. মুহাম্মদ ইলয়াস আব্দুল গনী : তারিখু মক্কা কাদিমান ওয়া হাদিসান, পৃ: ৭১)। তাফসীরে তাবারিতে সূরা আলে ইমরানের ৯৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে—
يه علامات بينات من قدرة الله ، وآثار خليله ابراهيم ،منهن أثر قدم خليله ابراهيم في الحجر الذي قام عليه .
 বায়তুল্লায় আল্লাহর কুদরতের পরিষ্কার নিদর্শন রয়েছে এবং খলিলুল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ) এর নিদর্শনাবলী রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল তাঁর খলিল ইব্রাহীম (আঃ) এর পদচিহ্ন ওই পাথরে যার ওপর তিনি দাঁড়িয়েছিলেন (তাফসীরে তাবারি : ৪/১১)।
ইব্রাহীম (আঃ) এর পদচিহ্নের একটি ১০ সেন্টিমিটার গভীর, ও অন্যটি ৯ সেন্টিমিটার। লম্বায় প্রতিটি পা ২২ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ১১ সেন্টিমিটার।
বর্তমানে এক মিলিয়ন রিয়েল ব্যয় করে মাকামের বক্সটি নির্মাণ করা হয়েছে। পিতল ও ১০ মিলি মিটার পুরো গ্লাস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এটি। ভেতরের জালে সোনা চড়ানো। হাজরে আসওয়াদ থেকে মাকামে ইব্রাহীমের দূরত্ব হল ১৪.৫ মিটার (ড. মুহাম্মদ ইলয়াস আব্দুল গনী : প্রাগুক্ত , পৃ ৭৫-৭৬)।
তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে দু’রাকাত সালাত আদায় করতে হয়। জায়গা না পেলে অন্য কোথাও আদায় করলে সালাত হয়ে যায়।

 মাতাফ

কাবা শরীফের চার পাশে উন্মুক্ত জায়গাকে মাতাফ বলে। মাতাফ শব্দের অর্থ, তাওয়াফ করার জায়গা। মাতাফ সর্বপ্রথম পাকা করেন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের, কাবার চার পাশে প্রায় ৫ মিটারের মত। কালক্রমে মাতাফ সম্প্রসারিত করা হয়। বর্তমানে শীতল মারবেল পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মাতাফ যা প্রচণ্ড রোদের তাপেও শীতলতা হারায় না, ফলে হজকারীগণ আরামের সাথে পা রেখে তাওয়াফ সম্পন্ন করতে পারেন।

 সাফা

কাবা শরীফ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, ১৩০ মিটার দূরে, সাফা পাহাড় অবস্থিত। সাফা একটি ছোট পাহাড় যার উপর বর্তমানে গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে এবং এ পাহাড়ের একাংশ এখনও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আর বাকি অংশ পাকা করে দেয়া হয়েছে। সমতল থেকে উঁচুতে এই পাকা অংশের ওপরে এলে সাফায় উঠেছেন বলে ধরে নেয়া হবে। সাফা পাহাড়ের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে এখনও পবিত্র কাবা দেখতে পারা যায়।

 মারওয়া

শক্ত সাদা পাথরের ছোট্ট একটি পাহাড়। পবিত্র কাবা থেকে ৩০০ মিটার দূরে পূর্ব- উত্তর দিকে অবস্থিত। বর্তমানে মারওয়া থেকে কাবা শরীফ দেখা যায় না। মারওয়ার সামান্য অংশ খোলা রাখা হয়েছে। বাকি অংশ পাকা করে ঢেকে দেয়া হয়েছে।

মাস’আ

সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানকে মাস’আ বলা হয়। মাস’আ দীর্ঘে ৩৯৪.৫ মিটার ও প্রস্থে ২০ মিটার। মাসআ’র গ্রাউন্ড ফ্লোর ও প্রথম তলা সুন্দরভাবে সাজানো। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ভিড় হলে প্রথম তলায় গিয়েও সাঈ করতে পারেন। প্রয়োজন হলে ছাদে গিয়েও সাঈ করা যাবে তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনার সাঈ যেন মাসআ’র মধ্যেই হয়। মাসআ থেকে বাইরে দূরে কোথাও সাঈ করলে সাঈ হয় না।

মসজিদুল হারাম

কাবা শরীফ, ও তার চার পাশের মাতাফ, মাতাফের ওপারে বিল্ডিং, বিল্ডিঙের ওপারে মারবেল পাথর বিছানো উন্মুক্ত চত্বর এ সবগুলো মিলে বর্তমান মসজিদুল হারাম গঠিত। কারও কারও মতে পুরা হারাম অঞ্চল মসজিদুল হারাম হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কুরআনের এক আয়াতে এসেছে,

لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ

তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে (সূরা আলফাত্হ: ২৭)
 অর্থাৎ হারাম অঞ্চলে প্রবেশ করবে। সূরা ইসরায় মসজিদুল হারামের কথা উল্লেখ হয়েছে। এরশাদ হয়েছে—
 سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ
পবিত্র সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় রাতের বেলায় নিয়ে গেলেন, যার চার পাশ আমি করেছি বরকতময়  (সূরা আল ইসরা:১)
 ইতিহাসবিদদের মতানুসারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে উম্মে হানীর ঘরের এখান থেকে ইসরা ও মেরাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তৎকালে কাবা শরীফের চারপাশে সামান্য এলাকা জুড়ে ছিল মসজিদুল হারাম, উম্মে হানীর ঘর মসজিদুল হারাম থেকে ছিল দূরে। তা সত্ত্বেও ওই জায়গাকে মসজিদুল হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment