Tuesday, December 13, 2011

হঠাৎ দৃষ্টি ও হারাম থেকে চক্ষুকে বিরত রাখার মধ্যে অনেক ফায়দা

জারীর ইব্‌ন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন আমার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখি।

হঠাৎ দৃষ্টি বা [نظر الفجاءة] এর অর্থ হল, অনিচ্ছায় বা হঠাৎ কোন অপরিচিত নারীর উপর দৃষ্টি পড়া। এ ধরনের দৃষ্টির বিধান হল, প্রথমবার এতে কোন গুনাহ নাই। তবে শর্ত হল, সাথে সাথে চক্ষুকে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর যদি সে তার দৃষ্টিকে দীর্ঘায়িত করে, তখন তার উপর গুনাহ অবশ্যই বর্তাবে।” [তুহফাতুল আহওয়াযী (৮/৪৯)]


ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, “হে আলী! তুমি প্রথম দৃষ্টির পর দ্বিতীয় বার দেখবে না। কারণ, তোমার জন্য প্রথম দৃষ্টি, আর পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য নয়”।

[আবু দাউদি ২১৪৯ ও তিরমিযি ২৭৭৭]

অর্থাৎ প্রথম দৃষ্টির পর আবার দেখো না এবং একবার তাকানোর পর দ্বিতীয়বার তাকাবে না। অনিচ্ছাকৃত প্রথম দৃষ্টির কারণে তোমার কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু তোমার জন্য দ্বিতীয়বার তাকানোর কোন অনুমতি নাই। কারণ, এতে তোমার ইচ্ছা যুক্ত হওয়ার কারণে তোমার গুনাহ হবে।


[এখানে এ কথা স্পষ্ট হয়, ইচ্ছা করে যদি প্রথমবার তাকায় তাহলেও গুনাহ হবে। আর যদি অনিচ্ছায় তাকায় এবং সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে গুনাহ হবে না।]



যে সব লোক মশকরা করে বলে,

প্রথমবার দেখে যদি কোন ব্যক্তি চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকে তার কোন গুনাহ হবে না, তাদের কথা যে ভ্রান্ত তা এ ব্যাখ্যার দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হল। কারণ, এখানে বলা হয়েছে ইচ্ছা করে তাকানো অপরাধ।

চাই প্রথমবার হোক অথবা দ্বিতীয় বার।


মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

বলুন, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ্ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের হৃদয়ে মোহর করে দেন তবে আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ্ আছে যে তোমাদের এগুলো ফিরিয়ে দেবে?’ দেখুন, আমরা কিরূপে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করি; এরপরও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩০]


চক্ষু হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে বড় নেয়ামত। গুনাহের কারণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাতে চক্ষু না নিয়ে যায় সে জন্য আল্লাহকে ভয় করতে হবে।


>>>>>>>>>>>>>><<<<<<<<<<<<

<<<

হারাম থেকে চক্ষুকে বিরত রাখার মধ্যে অনেক ফায়দা:


১. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশের আনুগত্য করা যাতে রয়েছে অনেক সৌভাগ্য ও কল্যাণ।


২. (চক্ষুর চাহনি নামীয়) বিষাক্ত তীরের আঘাত থেকে অন্তর নিরাপদ থাকে।


৩. অন্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে সখ্যতা ও তার উপর ঐক্য গড়ে উঠে। যারা তাদের অন্তরকে হারামের মধ্যে ছেড়ে দেয়, তাদের অন্তর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এ সখ্যতা থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, অন্তর বিক্ষিপ্ত থাকার কারণে তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্যই বিশেষভাবে নির্ধারিত হয়না এবং তাঁর জন্যই মহব্বতপূর্ণ হতে পারে না।


৪. চোখের হেফাজত না করলে আত্মা যেমন দুর্বল ও হতাশাগ্রস্ত হয় অনুরূপভাবে চোখের হেফাজতের কারণে মানবাত্মা শক্তিশালী ও প্রশান্তি লাভে ধন্য হয়।


৫. অন্তর নুরের আলো দ্বারা আলোকিত হয়, পক্ষান্তরে চোখের হেফাজত না করলে অন্তর অন্ধকারে ছেয়ে যায়।


৬. চক্ষুর হেফাজত দ্বারা একজন বান্দার মধ্যে হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার মত সত্যিকার যোগ্যতা ও দূরদর্শিতা সৃষ্টি হয়। আর তা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে ও উন্নত অবস্থানে পৌছতে সাহায্য করে। আর মানুষের সাথে সব ধরনের লেন-দেনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়ক হয়।


৭. অন্তরে সাহসিকতা ও অবিচলতা সৃষ্টি করে।

ফলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জন্য আধ্যাত্মিক শক্তি যথা, দূরদর্শিতা, প্রমাণ এবং বাহ্যিক শক্তি যথা, ক্ষমতা ও শক্তি উভয়কে একত্র করে দেন।

৮.শয়তানের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়। কারণ, দৃষ্টি হল শয়তানের জন্য সবচেয়ে বড় দরজা।


৯. অন্তর ভালো চিন্তার জন্য খালি হয় এবং ভালো কাজেই ব্যস্ত থাকে।


কারণ, যখন কোন অন্তর নারী ও সুন্দর ছেলেদের ছবি তাদের চিন্তা ও প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন সে কীভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আয়াত সম্পর্কে চিন্তা করবে? হাদিস থেকে একটি মাসআলা শিখবে? ফিকাহ-বিদদের কথা কীভাবে সে বুঝবে? এবং আসমান ও জমিনের বিষয়ে কীভাবে চিন্তা করবে?


১০. চোখের হেফাজতের দ্বারা অন্তর নিরাপদ থাকে। কারণ, অন্তর ও চক্ষু উভয়ের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক ও সংযোগ রয়েছে, উভয়ের একটি অপরটি দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং একটি কর্ম অপরটিকে প্রাণচাঞ্চল্যটা দান করে। ফলে একটি সংশোধন হলে অপরটির সংশোধন হয়, আর একটি নষ্ট হলে অপরটি নষ্ট হয়। যখন বান্দার দৃষ্টি নিরাপদ থাকে তখন তার আত্মাও নিরাপদ ও ঠিক থাকে, আর যখন মানুষের দৃষ্টি সঠিক না থাকে এবং খারাপ বস্তুর দিক দেখার কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তখন তার অন্তর বা আত্মাও খারাপ ও নষ্ট হয়ে যায়।


এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা আমার জন্য ছয়টি জিনিসের দায়িত্ব নাও আমি তোমাদের জান্নাতের দায়িত্ব নেব। যখন কথা বল, সত্য বল। আর যখন ওয়াদা কর, তখন তা পুরা কর, আর যখন তোমার নিকট আমানত রাখা হয় তা তুমি হকদারদের নিকট পৌছে দাও। তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত কর। তোমাদের চক্ষুকে অবনত রাখ আর তোমাদের হাতদ্বয় হারাম থেকে গুটিয়ে রাখ” । [ইমাম আহমদ ২২৫১ আলবানী রহ হাসান বলে মন্তব্য করেছেন]


collected from: সরল পথ

No comments:

Post a Comment